চাঁদপুর প্রতিনিধি : চাঁদপুরে ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের চতুর্থ ধাপের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে ভোটার উপস্থিতি কম ছিল। ভোট শুরুর ৪ ঘণ্টা পরও কোনো কেন্দ্রে দেখা যায়নি নারী ভোটারের উপস্থিতি। এই উপজেলায় স্বাধীনতার পর থেকে ৫৩ বছর ধরে কোনো নারী ভোটার ভোট দেননি। জাতীয় সংসদ, ইউনিয়ন এবং উপজেলা পরিষদ নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনেই এই উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নে নারী ভোটাররা ভোট দিতে যান না।
কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, ভোট দিতে এসেছেন পুরুষ ভোটাররা। ভোটের ৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও বরাবরের মতোই আসেননি কোনো নারী। ওই ইউনিয়নের বেশিরভাগ কেন্দ্রই নারী ভোটারদের উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে দুই একটি কেন্দ্রে কিছু নারী ভোটাদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া পুরুষ ভোটারের সংখ্যাও ছিল কম।
জানা যায়, মওদুদুল হাসান জৈনপুরীর (র.) ধর্মপ্রচার করার জন্য সৌদি আরব থেকে এ দেশে এসেছিলেন। প্রায় ৫৬ বছর আগে এই ইউনিয়নে একবার কলেরা মহামারী দেখা দেয়। মহামারী থেকে রক্ষা পেতে দোয়ার আয়োজন করা হয়। তখন ওই পীর মওদুদুল হাসান জৈনপুরী নারীদের পর্দা মেনে চলার জন্য উপদেশ দেন। তখন থেকে নারীরা ধীরে ধীরে ভোট প্রদানে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
চর মান্দারী শহীদ স্মৃতি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, আমার কেন্দ্রের মোট ভোটারের মধ্য পুরুষ ভোটার ১৩১০ জন এবং নারী ভোটার ১১৭৬ জন। তাদের মধ্যে ১৬৩ পুরুষ ভোটার ভোট দিতে এসেছে। আর মাত্র ১৩ জন নারী ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তবে সেই সব নারীদের বেশিরভাগই হিন্দু।
চর মান্দারী গ্রামের বৃদ্ধ ভোটার আব্দুর রশিদ বলনে, আমি সকালেই ভোট দিতে চলে এসেছি। তবে আমাদের ইউনিয়নের নারীরা কখনোই ভোট দেয় না। পীর সাহেব নির্দেশ দিয়েছিলেন নারীরা যেন পর্দার মধ্যে থাকেন। স্বাধীনতার পর থেকে কোনো নারী ভোট দেওয়ার আগ্রহ দেখায়নি, আমরাও জোর করিনি। আজ পর্যন্ত আমাদের বাড়ির কোনো নারী ভোট দেয়নি।
ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মনির হোসেন মনির বলেন, হুজুর নির্দেশ দিয়েছিলেন, এই ইউনিয়নের যেন কোনো মহিলা ভোট দিতে না যায়, সবাই যেন পর্দার মধ্যে থাকে। তার আদেশ মেনে কোনো নারী ভোট দিতে যান না। তবে কারও ভোট দিতে মানা নেই। গৃদকালিন্দিয়া হাই স্কুল কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম বলেন, আমার কেন্দ্রের মাত্র ৪ জন নারী ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
অতিরিক্ত আ লিক নির্বাচন কর্মকর্তা কুমিল্লা ও রিটার্নিং অফিসার কচুয়া এবং ফরিদগঞ্জ মো. মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমরা প্রত্যেক ভোটারদের আসার জন্য নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা করেছি। শুধু আমরা নয়, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনও তাদের ভোটকেন্দ্র আসার জন্য নানাভাবে প্রচারণা করেছেন। তারা কী কারণে আসে সেটা জানি না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।